দিনলিপি — পহেলা এপ্রিল — ২০১৯।
মাঝে চিন্তা করেছিলাম প্রতিদিন লিখবো টানা দশ বছর কিন্তু হয়ে উঠেনি, বরাবরের মত চরম অলস ও অকর্মণ্য হওয়ায় আমি সব ডেটলাইন ফেইল করেছি। তবে আজ মনে হচ্ছে আবার শুরু করি, আজ, অদ্য থেকেই।
১/ বেঁচে থাকা একটা দূর্বিষহ প্রসেস, প্রতিদিন স্বাপদসংকুল জনপদে হিংস্র মানবরূপী ধুরন্ধুর প্রাণীদের সাথে নানাবিধভাবে পিঠ বাচানো, যুদ্ধে জড়ানো- এভাবেই বেঁচে থাকা।
২/ নতুন এক ভদ্রমহিলার সাথে পরিচয় হল অদ্ভুতভাবে, তিনি সদ্য ডিভোর্সড, ১ বাচ্চার মা, আজ নিয়ে দুদিন কথা হলো। মনে হচ্ছে মহিলার জীবনে এখন একটা গ্যাপ আছে তা তিনি যেকোন ভাবে পূরণ করতে চাইছে। আমি তাকে খুলেই বললাম, বন্ধুত্ব ছাড়া তার কাছে আমার কোন কিছু চাওয়া নেই। আমি চাইনা আমার প্রতি তার কোন আকাঙ্খা তৈরি হোক এবং ভুল বোঝাবুঝির তৈরি হোক।
৩/ বস লোকটা খারাপ না, বেশ ভালো, বলতে গেলে আমার এ যাবতকালীন পাওয়া সব বসের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। কিন্তু লোকটা মাঝে মাঝে লিমিট ক্রস করে ফেলে আর আরেকজন মানুষকে সম্মান দিতে একেবারেই জানেনা। আর মাঝে মাঝে এমন আচরণ করে যে প্রচন্ড মেজাজ গরম হয়ে যায় আর কোন কাজ করতে ইচ্ছে করেনা।
বাংলাদেশে যতদিন আছি আর চাকরি পরিবর্তন করার ইচ্ছা ছিলনা, কিন্তু আপাতদৃষ্টীতে মনে হচ্ছে এখানেও বেশিদিন টিকা যাবেনা। রেসিগনেশান লেটার লিখে প্রিণ্ট করে রেখেছি, তবে এখন দেওয়া যাবেনা, এখন দিলে বলবে কাজের ভয়ে রেসিগনেশান দিয়েছি।
কিছুদিন কাজটাজ করে একটা গুডউইল বিল্ড করতে হবে, আর এর মাঝে কি করবো তার একটা উপায় বের করতে হবে, বেকার হওয়া যাবেনা, তবে এ চাকরীও বেশিদিন করা যাবেনা। কাজ করতে সমস্যা নাই, কিন্ত গোলাম হতে পারবোনা।
৪/ জিলিয়ান আজ আবার বলল — আমার নাকি অটিস্টিক সিন্ড্রোম আছে, জানিনা আছে কিনা এখনও তবে ও যেহেতু বলেছে তাই চেক করানো দরকার কিন্তু সারাদিন খুঁজে কোন স্পেশালিস্ট পেলাম না ঢাকা অথবা আশেপাশে। জিলিয়ানকে আমার বেশ পছন্দ, আমার সবসময় মনে হয় ওর কাছে একটা কিছু আছে যা দিয়ে আমার সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। আমার যখন খুব খারাপ লাগে, আমি ওর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললে মন ভালো হয়ে যায়, কেন হয় আজও জানিনা ।
৫/ তানজীর এবং ওদের গ্রুপের সাথে অফিসের লাঞ্চটাইম বেশ ভালোই যাচ্ছে ইদানীং, তবে সে বন্ধু হলেও কাজের সময় ঠিকই চরম প্রফেশনাল তা আজ আবার বুঝতে পারলাম। সুতরাং সে বন্ধু বলে তার কাছে অতিরিক্ত কোন ফেভার আশা করা যাবেনা।
৬/ আজ জিমির সাথে বেশ কিছুক্ষণ আলাপ করলাম, কিন্তু মনে হলো আমরা দুইজনই একটা প্যারালাল কনভারসেশান চালিয়ে যাচ্ছি, সে একটা কিছু বলছে আমি শুনছিনা আর আমি একটা বলছি তা সে শুনছেনা। এরকম প্রায় হয়, আমার বসের সাথেও, আর এহেন পরিস্থিতিতে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করেনা।
যারা আমার কথা শুনেনা তাদের কথা শুনার আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমার নেই, এবং তাদের জোর করে কিছু জানানোর প্রয়োজনও আমি মনে করিনা।
৭/ রাতে ছোট চাচার সাথে আলাপ হলো, এ মূহুর্তে তার প্রধান দুটি চাহিদা হলো — ল্যাপটপ এবং জমি লেখার জন্য টাকা। আমি এ জিনিসটা বুঝিনা পৃথিবীর সব মানুষ কেন মনে করে — সামনের জন বোকা, গন্ডমূর্খ আর বাকি সবাই চালাক- এ বিষয়টা আমার এখনও বোধগম্য হয়নি, হয়না।
মানুষ কি করে, মানুষ কি করবে এটা তাকে অবজার্ভ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় এবং মানুষ যে একটা খুবই অবিশ্বাস্য প্রাণী তা আব্বা মারা যাওয়ার দিনই বুঝেছিলাম,তারপর থেকে প্রতিজ্ঞা যতদিন বেঁচে আছি কোনদিন কোন মানুষকে বিশ্বাস করবোনা, কারও উপর ডিপেন্ডেন্ট হবোনা, এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি সেই প্রতীজ্ঞায় চলার।
আব্বা দিনশেষে রাতে বাসায় এসে খুব কাঁদত, সেই অভ্যাসটা আমারও তৈরি হয়ে গেছে, দিনশেষে শুধু একা বসে কাঁদি আর লিখি।
দিনশেষের চিন্তা — শিহাব।